আজ- ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ,   রবিবার      

এখনো স্বপ্ন দেখে প্রতিবন্ধী আকবর আলী


আবু বক্কার, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাাঁর সাপাহার উপজেলার আইহাই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রতিবন্ধী আকবর এখনো স্বপ্ন দেখে নিজের একটি বাড়ি হবে,বিয়ে হবে আরো কতো কি। প্রতিবন্ধী আকবর ( ৪৮), পিতা আব্দুল্লাহ,মাতার নাম আকবরের মনে নেই, পিতা-মাতা দুজনেই মারা গেছেন অনেক বছর আগে। সীমান্তবর্তী এই উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম সেখানে কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় কাজের সন্ধ্যানে আকবরের ৩ ভাই মনতাজ,লতিফ ও বাবু অন্য দেশে পারি জমায়,আর এক মাত্র বড় বোন বিবাহ সুত্রে রয়ে যায় এদেশে। প্রকৃতির খেয়ালে ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার আকবর বেঁচে থাকার তাগিদে কাজের সন্ধ্যানে চলে আসে সাপাহার সদরে। সাপাহার জিরো পয়েন্টে স্বর্গীয় নিবারণ সাহার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে প্রথম সে কাজ নেয় প্লেট ধোয়ার, ৩ বেলা খেয়ে কাজ শেষে রাতে তার কাজের বেতন হিসেবে ১০ টাকা করে পেতো। এভাবেই চলছিলো তার জীবন। তৎকালিন সময়ে সাপাহার শীতকালীন মাস ব্যাপি মেলায় সার্কসের মালিক ও কিছু কর্মী আকবরকে দেখে তাকে সার্কাসে আসার জন্য আহবান করেন এবং তাদের কথায় সে রাজি হয়ে ২/৩ দিন শোতে অংশগ্রহন করে। কিন্তু আকবর ভিষন লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় সে আর সেখানে টিকতে পারলো না। ফিরে এলো তার আগের কর্মস্থলে। এর মধ্যে সে মোকতার নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে। সংসার শুরু হতে না হতেই আকবরের সংসার জীবনে নেমে আসে কাল বৈশাখী ঝড়। সামান্য উপার্জন দারিদ্রতা ও জরাজীর্ণ একটি মাথা গোজার ঠাঁই সর্বপরি আকবরের খর্বাকার শারিরিক গঠন পছন্দ হয়নি তার স্ত্রীর। তিলে তিলে জমানো ১০ হাজার টাকা ও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আকবরকে ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী মোকতারা বানু। বর্তমানে সাপাহার আদি চাঁপাই হোটেলে মাসিক বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকায় ভোর থেকে রাতের ১০টা পর্যন্ত হোটেলের এটো খালা বাসন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে। ঐ হোটেলে দোতালায় ছোট্ট একটি চিলেকোঠায় মাসিক ৪৫০ টাকা ভারায় রাত্র যাপন করে। পত্রিকার প্রতিবেদক প্রদীপ সাহা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাপাহার শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুব মোরসেদ দু’জন একদিন রাস্তায় যেতে যেতে আলাপ করতে করতে হঠাৎ দেখেন- রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়িয়ে থাকা অটোরিক্সায় পা ঝুলিয়ে হুটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে আকবর একাকী কি যেন ভাবতে থাকে ? তার জীবনের অতীত না বর্তমান ? তার তিলে তিলে জমানো টাকায় ২ শতাংশ জমি কিনেছে। তার শেষ আশা বা স্বপ্ন একটি বাড়ী বানানো। একটি বাড়ি না থাকায় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বাড়ী তৈরী হলে আবারো বিয়ে করে অন্যান্যদের মতো সংসার করবে। লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে আকবর জমানো মনে মনে দুটি মেয়েকে পছন্দ করে রেখেছে। একটির উচ্চতা বেশি, অন্যটির কম। সুযোগ হলে কম উচ্চতার মেয়েটিকে বিয়ে করবে। এতো কিছুর পরেও সে দেশের বিভিন্ন খোঁজ খবর রাখে এর মধ্যে সে জানতে পারে সরকার গরীব মানুষদের নাকি বাড়ী বানিয়ে দিচ্ছে। আবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের গরীবদের ৬৮ হাজার বাড়ী বানিয়ে দেওয়া হবে ? তারও তো ২ শতাংশ জমি আছে সে কি একটি পেতে পারে ? ৪৮ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আকবর জানেনা কত দিনে সে একটি বাড়ী তৈরী করতে পারবে ? কত দিনে তার স্বপ্ন পূরণ হবে ? কথগুলো বলতে বলতে চোখ ছল ছল করতে থাকে আকবরের। চোখের পানি আটকাতে বৃথা চেষ্টায় তাকিয়ে থাকে দুর সীমানায়। সরকারের অনুদানের বাড়ীটি কি জোটবে তার কপালে ? কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন দরিদ্র আকবর আলী।

Print Friendly, PDF & Email

This Related



Leave a Reply

Your email address will not be published.

Recent Posts Slider

সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



@২০২১ সর্বস্বত্ব স্বত্বা‌ধিকার সংর‌ক্ষিত.
প্রকাশক ও সম্পাদক- এম এ আব্দুল্লা্হ আল মামুন
নির্বাহী সম্পাদক- মোঃ বেলাল হোসেন
 বার্তা সম্পাদক- মোঃ মনিরুল ইসলাম।
Email: dearsbd24@gmail.com
Mobile: 01713897235

সম্পাদনা ও প্রকাশনাঃ
হেড অফিসঃ ১/এ (৩য় তলা), রোড# ০৭, সেক্টর# ০৭, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত দৈনিক ডিয়ার্স  বিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম।
Website: www.dearsbd24.com
Mobile: 01913630061

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না
Design Developed & Hosted By- Sundarban IT Limited