আবু বক্কার সাপাহার ( নওগাঁ ) জেলা প্রতিনিধি :বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সফল সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সফল সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও গন মানুষের প্রিয় নেতা আব্দুল জলিলের ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী ৬ মার্চ।
আজ শুক্রবার।
এই দিনে ব্যাংককের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৩৯ সালে আব্দুল জলিল নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ মহল্লায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন নওগাঁ শহরের একজন সুনামধন্য ব্যবসায়ী। পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কে.ডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থকে বি.এ. অনার্স (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) ও ১৯৬৪ সালে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ব্যারিষ্টারী (বার এট ল) পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান।
১৯৬৯ সালে তখন দেশে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলছে। এ সময় বঙ্গবন্ধু বিলেত যান এবং অধ্যয়নরত প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। জলিলের পরিচয় হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬৯ সালেই দেশে ফিরে আসেন এবং ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে। রাজনীতি করতে এসে ব্যারিষ্টারী পড়া আর হয়না।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর উপর নওগাঁ মহকুমার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাক সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বিভিন্ন তালবাহানা ও কালক্ষেপন শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ যা স্বাধীনতার ভাষণে সারা দেশবাসী আন্দোলিত ও উজ্জিবিত হয়ে উঠে, যা স্বাধীনতার দলিল হিসাবে পরিচিত। ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সমগ্র বাঙ্গালী জাতি প্রতিবাদ, প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তোলে। পাক সামরিক জান্তা পূর্ব পরিকল্পিত নীল নকশার প্রতিফলন ঘটায়। গ্রেপ্তার করেন বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা সর্ব্বকালের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
ফুঁসে উঠে সমগ্র বাঙ্গালী জাতি। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। আব্দুল জলিল নওগাঁ মহকুমার আপামর জনসাধারণ, কর্মরত ই.পি.আর. পুলিশ আনছার বাহিনীকে সুসংগঠিত করে জীবন বাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং ১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই অঞ্চলের প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে আব্দুল জলিল নওগাঁ থেকে যাওয়ার সময় ৭৪ জন ছেলে ও তাঁর দলবল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান এবং বালুরঘাটে আত্রাই নদীর পূর্বতীরে শ্মশান কালী মন্দিরের পার্শ্বে একটি গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভর্তি ও বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামাড়পাড়া, প্যারিলাসহ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ঐসব ক্যাম্প থেকে হায়ার ট্রেনিং এর জন্য শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল জলিল।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ও যোদ্ধাদের খরচ মোকাবিলায় আব্দুল জলিল মহান স্বাধীনতার ৯ মাস যুদ্ধে ভারতের প্রত্যেকটি রিসিপশন ক্যাম্পের জন্য নওগাঁ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ব্যাংক থেকে ৭১,৮০,০০০/- টাকা ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষকে ডেকে নিয়ে এসে ব্যাংকের ভোল্ট রেজিষ্টারে এন্ট্রি করে উক্ত টাকা গ্রহণ করেন। সেই অর্থ দিয়ে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পগুলো পরিচালিত করেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধুর নতুন সরকারের নিকট খরচ অন্তে ৩৪,৫২,০০০/- টাকা ফেরত দেন।
নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এসব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরে জীবন বাজি রেখে দেশ মাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা।
আব্দুল জলিল শুধু মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকই ছিলেন না- ‘বঙ্গবাণী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মালিকও ছিলেন। আব্দুল জলিলের সাহায্য, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় বালুরঘাট নিউমার্কেট এলাকার সুনীতি প্রিন্টিং প্রেস থেকে উক্ত ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকাটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হত। উক্ত পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার মকবুল হোসেন ও সহ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন খন্দকার আবু বককর সিদ্দিকী। উক্ত ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকাটি মোট ২৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, দু’লক্ষ মা’বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এদেশের বিজয় অর্জিত হয়।
আব্দুল জলিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে একজন মহান সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালে আত্রাই রাণীনগর নকশালী রাজনীতির ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। শ্রেণি শত্রু খতমের নামে নকশালরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আব্দুল জলিল নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝুঁকি নিয়ে নকশালদের দুর্গ ভেঙ্গে চুরমার করে রক্তাক্ত প্রান্তরে সোনালী সূর্যের আলো প্রদান করেন। দমন করেন নকশালী তৎপরতা।
১৯৭১ সালে তিনি সর্ব প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে নওগাঁ সদর আসনে এম.পি. নির্বাচিত হন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষের শত্রুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মানবতা বিরোধীরা, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ বাহিনী ও দেশী বিদেশী শত্রুরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর গোটা পরিবারকে নৃশংশ ভাবে হত্যা করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে জারি করা হয় সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয় গলা টিপে। অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আব্দুল জলিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর কারাভোগের পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৮২ সালে পুনরায় সামরিক শাসন জারি করার পর গ্রেপ্তার করে আব্দুল জলিলকে। ১৫ দিন অজ্ঞাত স্থানে বন্দী রেখে অবর্ণনীয় দৈহিক নির্যাতন চালানো হয় তার উপর। জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর মাতার মৃত্যু হলেও সামরিক জান্তারা মায়ের মুখখানা এক নজর দেখার জন্য কোন সুযোগ দেয় নাই। ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে তিনি পর পর দু’বার নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের এম.পি. নির্বাচিত হন এবং সংসদে বিরো
This Related
- » বুড়িগোয়ালিনীতে বৈদ্যুতিক গ্রাহকের নিকট হতে নিরাপত্তা জামানতের টাকা গ্রহন পোড়াকাটলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
- » নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুরে ত্রিশূল’র উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী, সাবান ও মাস্ক বিতরণ
- » শ্যামনগরের এমপি পুত্র রাজিবের মানবিকতা
- » প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইউএনও কল্যাণ চৌধুরী
- » সাংবাদিক হাফিজুল হক এর মানবিক দৃষ্টান্ত
- » সাপাহারে সেচ্ছাসেবকদের এক বেলা খাবার যোগান দিবে নারী নেত্রী ইস্ফাত জেরিন মিনা
- » খাদ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাপাহারে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু
- » সাপাহারে ৪০ প্রতিবেসীকে দু’দিনের খাদ্য সামগ্রী দিলেন যুবলীগ কর্মী সাদ্দাম -দৈনিক ডিয়ার্স বিডি
- » নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাপাহারে বাজার মনিটরিং
- » সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রাতারাতি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ কেটে অবৈধ নাইনটি স্থাপন; না দেখার অভিনয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের
Leave a Reply